The story of a brave man (এক সাহসী মানুষের গল্প )

সবুজ উপত্যকায় ঘেরা। পাহাড়ের কোলে। শান্ত সিগ্ধ এক ছোট সুন্দর গ্রাম। অল্প সংখ্যক পরিবারের বসবাস। সকলেই কৃষিজীবী। উর্বর মাটি। সেই মাটিতে খুব ভালো ফসল ফলে। প্রতিটি পরিবার যে পরিমান অর্থ বা শস্য প্রয়োজন তা জমি ও পাহাড়ের কাঠ পাতা ও অন্যান্য বনজ সম্পদ থেকে মিটে যায়। পরম্পরাগত ভাবে প্রতিটি পরিবার সুখে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করে আসছে । 

গ্রামের নিকট যে পাহাড় বা পর্বত রয়েছে। তার পাদদেশে এক গুহা রয়েছে। এই গুহা গ্রামের বসতি শুরু হওয়ার আগে থেকেই রয়েছে। গ্রামের লোক কোনোদিন গুহার নিকট যায় না। যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। জনবসতি,পাহাড়, গুহা। পাহাড়, গুহা, জনবসতি। নিজের নিজের সহাবস্থান রেখে চলে। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সময় বয়ে চলে। 

কিন্তু এই স্বাভাবিক ছন্দ মাঝখানে তাল কেটে যায়। একদিন গ্রামের এক রাখাল। যে গ্রামের সব পরিবারের গরুর পাল দেখাশোনা করে। সারাদিন গোচারণ ভূমিতে ছেড়ে রাখে ও দিনের শেষে গ্রামে ফিরে। প্রত্যেকের বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়। একদিন সে দিনের শেষে গরুর পাল নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে না। গ্রামের মধ্যে শোরগোল পড়ে যায়। গ্রামের সকলে মিলে। গ্রামের আশেপাশে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোন সন্ধান পায় না। হাল ছেড়ে দিয়ে সকলেই গ্রামে ফিরে আসে। 

গ্রামবাসীরা এক জায়গায় মিলিত হয়ে আলাপ আলোচনা শুরু করে। এবং ভাবনা চিন্তা করতে থাকে, এক জলজ্যান্ত যুবক ছেলে কোথায় হারিয়ে যেতে পারে। তাঁর কি বিপদ হতে পারে। সম্ভাবনার দিক গুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে থাকে। এমন সময় এক ব্যক্তি, যে রাখাল বালকের মত, সেও গরুর পাল দেখাশুনা করে হঠাৎ বলে ওঠে  -  ' আমি ওকে দেখেছি। ও তাঁর গরুর পালকে নিয়ে গুহার দিকে গিয়েছে। গ্রামের লোকজন অতি উৎসাহের সঙ্গে জানতে চাইল। তারপর কি হল। কোনদিকে গেল । ব্যক্তিটি বলে উঠে না। তারপর সে কোন দিকে গেলো আমি বলতে পারব না।'  এই কথা শুনে উপস্থিত লোকজন সাময়িক ভাবে হতাশ হয়ে পড়ে। আলাপ আলোচনা চলতেই থাকে। শেষে এক সিদ্ধান্ত নেই , যে সবাই মিলে একবার গুহার আশেপাশে খোঁজাখুঁজি করে দেখবে। যদি কিছু বুঝতে বা দেখতে পাওয়া  যায়। 

সেই মত পরদিন সকালে। গ্রামের লোকজন সবাই মিলে গুহা মুখের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। এবং চারপাশে ঘুরে দেখে। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া রাখাল ছেলেটির কোন সন্ধান পায় না। এমন কি কোন চিহ্ন দেখতে পায় না। গ্রামের লোকজন হতাশ হয়ে গ্রামে ফিরে আসে।  এবং সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেয়, যে সত্যি সত্যি রাখাল ছেলেটি কোথাও হারিয়ে গেছে। 

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সময় বহে চলে। রাখাল ছেলেটির পিতামাতা ছাড়া। গ্রাম বাসীদের মনে ছেলেটির স্মৃতি ঝাপসা হতে থাকে। অবশেষে স্মৃতি থেকে মুছে যায়। 

বেশ কয়েক বছর পর। গ্রামের মধ্যে একই ঘটনার স্মৃতি ফিরে আসে। এবারও অন্য একজন রাখাল ছেলে সকালবেলা গরুর পাল নিয়ে বেরিয়ে দিনের শেষে বাড়ি ফিরে আসে না। পূর্বেকার ঘটনার মত। গ্রামবাসীগণ একই উদ্যোগ গ্রহণ করে। পুনরায় অসফল  হয়। এবং জীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে যায়। 

এদিকে হয়েছে কি! দ্বিতীয় রাখাল ছেলেটি। স্বাভাবিক কৌতূহল নিয়ে সাহস করে। গুহা মুখ দিয়ে গুহার মধ্যে প্রবেশ করে। এবং ক্রমশ ভিতরে আরো ভিতরে চলে যায়। যত ভিতরে যেতে থাকে। ততই বিস্ময়ে অবাক হতে থাকে। ছেলেটি দেখতে পাই। গুহার মধ্যে এক সুবিশাল সুন্দর স্থান। এক রাজপ্রাসাদ। সেখানে কি নেয়। বড় দীঘি। সুন্দর ফুলের বাগান। প্রচুর প্রাচুর্যে ভরপুর। এক কথায় স্বর্গীয় পরিবেশ। এখানকার সব লোকজন সুখী, হাঁসিখুশি ও আনন্দে জীবন যাপন করছে। এক কথায় এখানে মানুষের ভোগের সকল প্রকার ভোগ্য সামগ্রী মজুত রয়েছে। 

রাখাল ছেলেটির বিস্ময়ের ঘর কাটে না। বিস্ময়ে বিভোর হয়ে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে দেখতে পাই। তাঁর গ্রামের সেই হারিয়ে যাওয়া ছেলেটি এখানে বেশ খুশি ও সানন্দে বসবাস করছে। পরষ্পর সামনা সামনি হলে দুজনেই দুজনকে চিনতে পারে। 

বন্ধুরা, সাহস করে এগিয়ে চলুন। ওপাশে এক অসীম সম্ভবনাপূর্ণ জগৎ, আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে!!

শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের কথায় - এগিয়ে পড় ,এগিয়ে পড়,নিজের বর্তমান অবস্থায় সন্তুষ্ট থেকো  না। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ